সোমবার , ১৬ নভেম্বর ২০২০ | ৮ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
  1. article
  2. Artist
  3. কবিতা
  4. কলাম
  5. গল্প
  6. গুণীজন

ট্রেন – ৪৭৪ (একটি হরর গল্প) পর্ব-৫

প্রতিবেদক
রুদ্র আমিন
নভেম্বর ১৬, ২০২০ ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ
Train 474 Rudra Amin

ট্রেন – ৪৭৪ (একটি হরর গল্প) পর্ব-৪

পরাণ মাষ্টারের জল খাবার মানে অনেক কিছু, গরম ভাত, তাতে যে ডাউস সাইজের মাছের মাথা রাখা আছে, তাতে মনে হচ্ছে এ যুগে এমন বড় মাছের দেখা পাওয়া মুশকিল, সাথে আস্তো বুনো হাঁসের রেজালা, আট পদের সবজি, দই, দুধ, শরবত, খেজুর রসের পায়েস, তিন পদের মিষ্টি, সাথে পানদানিতে মিষ্টি পান, এত গুলো খাবার কি মানুষ খাবে, তবে সকালে কুয়ো তলার তোলা জলের ব্যাপারটা অনুমান করলে বোঝা যায়, পরাণ মাষ্টার আদতে কি কোন স্কুলের মাষ্টার ছিলেন, না এই অত্র এলাকার জমিদার, দুপুরে পেটপুরে খেলাম, এমন ভালো যে রেধেঁছে তাকে পুরস্কার দিতে ইচ্ছে হচ্ছে, সে হয়তো অতিথির নমুনা বুঝতে পেড়েছে, খাওয়ার পর যেন আরও ঠান্ডাটা বেড়ে গেলো, একটু ঘুমানো প্রয়োজন, ঘুমের সবচেয়ে কার্যকরী থেরাপী হলো বই নিয়ে শুয়ে শুয়ে পড়ার চেষ্টা করা, একটা ডকুমেন্টরী নিয়ে পড়ছিলাম, তন্দ্রা চলে আসলো, মনে হচ্ছিল এ ঘুম যেন শত বছরের পুরাতন, নমস্কার কর্তা বাবু, হামাকে তুই চিনতে পেরেছিস, আমি হরি গাড়োয়ান, বাবু তুই বড় ভালো মানুষ, তুই এখান থেকে চলে যা, হামার কসম, তুই চলে এখান থেকে, ওরা রাত হলেই তোকে মেরে কেটে খাবে, তুই কি এখনও কি কিছুই টের পাচ্ছিস না বাবু? তুই চলে যা এখান থেকে।

হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো, এখন মধ্যরাত্রি হবে হয়তো, একটা পেঁচা বাহিরে ডেকে চলছে, আমি কতক্ষণ ঘুমালাম নিজেই ধরতে পারছি না, বাহিরে খুব ঘোঙ্গানীর মত শব্দ হচ্ছে, হঠাৎ এই রুমের একমাত্র জানালার দিকে চোখ গেলো, কবর গুলোতে কে যেন বাতি জ্বালিয়ে রেখেছে, এখানে তো ইলেকট্রিসিটি নেই, এত আলো কোথা থেকে এলো? হঠাৎ তিন চারজনের একটা দলকে দেখলাম একটা কবর ঘিরে কি যেন মন্ত্র পাঠ করছে, একটা কুকুর চারপাশে ঘোরাঘুরি করছে, হঠাৎ দেখি পরাণ মাষ্টারের সেই অন্ধ কুকুর, আরে ঐ তো পরিতোষ, তার পিছনে তার ছেলে হারাধন, কি করছে ওরা, বুকের ভিতর ধুর ধুর করছে, নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না, এরা কবর থেকে একটা মরদেহ তুলে আনলো, এক একেক জন বুনো নেকড়ের মত সুর করে কাঁদতে লাগলো, এরপর মরা দেহটাকে মাটিতে তুলে তাতে বসে খেতে লাগলো, কি বিভৎস, কি মারাত্মক, হরি কি তবে ঠিকই বলেছিলো স্বপ্ন যোগে।

হঠাৎ কাঠের দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ এলো, আমি ভড়কে গেলাম কীভাবে এদের থেকে নিস্তার পাওয়া যায়, জানালা বন্ধ করে দিলাম, আমার এসব দেখে ভয়ের চেয়ে বমি পাচ্ছে, কিন্তু দরজায় ওপাশে কে? আবারও ঠক ঠক করে উঠছে, ওপাশে একটা বেড়ালের মিয়াও মিয়াও শব্দ শুনতে পেলাম, আমি জিজ্ঞাসা করলাম কে? কে ওখানে? উত্তর এলো, ডাঃ সাহেব আমি পরাণ মাষ্টার আপনার জলখাবার নিয়ে এসেছি, আমি ভাবলাম ঘরের বাইরে ঘটনা আর ভিতরের ঘটনা দুটোই ভিন্ন কিনা, দরজা খোলার জন্য এগুতে লাগলাম খেয়াল করলাম, পা সরাতে পারছি না, পায়ের আবার কি হলো, নীচে তাকিয়ে দেখি দুটো তাগড়া হাত আমাকে ধরে আছে, স্পষ্ট গলায় শুনতে পেলাম হরি বলছে, বাবু তুই দরজা খুলবি না, তোর ক্ষতি হয়ে যাবে, হায় ঈশ্বর একি করে সম্ভব, এর ভিতরে দরজা খুলে গেলো, পরাণ মাষ্টার সদৃশ্য একটা কিছু ঢুকলো, যার মাথাটা পাঠার মতো, নেকড়ে মুখি আর চার পাঁচজন, একটা বিকট পঁচা গন্ধ এলো, দেখি সেই চোখহীন অন্ধ ছেলেটা একটা মৃত মানুষের হাত চাটতে চাটতে ঘরে ঢুকে গেছে।

এরপর আমার আর কিছুই মনে নেই, আমাকে পাওয়া গেলো, মাতুয়াইল পুরাতন গোরস্থানের পাশে, কে বা কারা আমাকে বাসা পর্যন্ত পৌছে দিয়েছিলো আমার মনে নেই, আপতত, আমার পাশে ডাঃ ফজলে এলাহী কে দেখতে পাচ্ছি, সে বললো স্যার সব ঠিক হয়ে যাবে, আপনি বিপদমুক্ত। আপনি বিশ্রাম নিন, আমার বিছানার পাশে বসা দুই জন অল্প বয়সী রূপবতী নার্সকে দেখতে পেলাম, এলাহী চলে যাচ্ছে, আমি ওকে বললাম বিকালে একাবার এদিকে একটু এসো কিন্তু, নার্স দুইজনকে খুব বির্মষ দেখাচ্ছে, ইশারায় তাদেরকে কাছে ডাকলাম বললাম তোমাদের নাম কি? ওরা বললো স্যার আমি ইরাবতী আর ও লিলাবতী, আমরা দুই বোন, আপনার সেবায় নিয়োজিত, আমি বললাম আচ্ছা ইরাবতী আর লীলাবতী তোমরা কি গান জানো, তারা দুইজন ফিক করে হেসে দিলো, বললাম তোমরা একটা গান ধর, এরা বললো স্যার কোন গানটা? আমি বললাম , “লীলাবালি লীলাবালি বরজপতি সই গো..”

সন্ধ্যা হয়ে গেছে, কখন যে লীলাবতী আর ইরাবতীর গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তা মনে নেই, কোথায় যেন আযান হচ্ছে, মোয়াজ্জিন এর কন্ঠে কি যে যাদু আছে, অনেকদিন ধর্মকর্ম করি না, নামায পড়তে ইচ্ছে হলো, কিন্তু শরীরের এই অবস্থা কতুটুকু পারবো জানি না, ইরাবতীকে ইশারায় ডাকলাম, বললাম, তুমি কি চাল ভাজতে পারো? সে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো, আমি বললাম আপতত এক বাটি চাল ভেজে নিয়ে এসো, সাথে লেবু লবঙ্গ চা খাবো, আর লীলাবতী এদিকে আসো তোমার পরীক্ষা নিই, খাতা কলম আছে? সে মুচকী হেসে বললো জ্বী স্যার আছে, ইরাবতী চাল ভাজতে চলে গেলো, লীলাবতী আমার পাশে খাতা কলম নিয়ে পরীক্ষার প্রশ্নের জন্য অপেক্ষা করছে, এর মধ্যে ডোর বেলের আওয়াজ শুনতে পেলাম, কিছুক্ষণ পর দরজার আওয়াজ শুনতে পেলাম, আচ্ছা লীলাবতী তুমি একটা চার বছরের ছেলের ছবি আঁকবে, যে ছেলে সবই থাকবে শুধু কোনো চোখ থাকবে না।

চলবে–