সোমবার , ৩০ নভেম্বর ২০২০ | ৮ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
  1. article
  2. Artist
  3. কবিতা
  4. কলাম
  5. গল্প
  6. গুণীজন

ঝরে পড়া ফুল (পর্ব-১)

প্রতিবেদক
রুদ্র আমিন
নভেম্বর ৩০, ২০২০ ১২:০৫ অপরাহ্ণ
ঝড়ে পড়া ফুল

দীনা আর রুনা যেন একই বৃত্তের একগুচ্ছ তাজা ফুল। কিন্তু সব ফুল কি মালা হতে পারে, ঝরে কত ফুল পথের ধারে। না, তারা দুজন আসলে গাছে ফোটা কোনো ফুল নয়, ওরা হলো ফুলহারা গ্রামের দুটি ফুল। যাদের জীবনে কোন বিশেষ দিনের আনন্দকে আলাদা করে দেখার কোন সুযোগ নেই। ওদের সারাদিন কাটে সমাজ সংসারের সাথে বেঁচে থাকার যুদ্ধে লড়াই করার কথা ভেবে ভেবে।

গরীব বাবা মায়ের দুই সন্তানের মাঝে প্রথম সন্তান রুনা, তার পরেই দীনা। এখন রুনার বিয়ের বয়স। শরীরের ভাঁড় ভালোই বোঝে সে। কখনো কখনো সুতি কাপড়ে নিজেকে সামলায়, বাহিরে বের হতে কষ্ট কিংবা ভয় হয় তার। কাঙ্খিত পুরুষ অনুভূত হয় না তা কিন্তু নয়, চাহিদা থাকলেও তেমন চাওয়া নাই। প্রকাশ করার পরিস্থিতি অভাবের সংসারে অনুপস্থিত বরাবরই।

বাবা বর্গা চাষী। গত বছর আল্লাহ চোখ তুলে তাকিয়ে ছিলো বলেই এই খরার বছরটা কোনো রকম কেটে যাচ্ছে আধা পেট খেয়ে! রুনার কথা ভেবে কাশেম চুপ করে বসে থাকে। মেয়েটির বিয়ের দিতে পারলেই বেঁচে যেতাম। আমরাও বাঁচি মেয়েটাও বাঁচে। মেয়ে তো দেখতে অসুন্দর নয়, গরীবের আল্লাহ আছে, মাঝে মাঝে বিশ্বাস হয় না, আবার মাঝে মাঝে বিশ্বাস হয়।

রুনার ছোট বেলার বান্ধবী পারুলের কয়দিন আগে ছেলে হয়েছে। রুনার বিয়ে হলে তো মেয়েটার ঘরেও সন্তান দেখতে পেতাম। খোদার কাছে প্রার্থনা যেন একটা ভালো ছেলে ওর জন্য পাঠিয়ে দেয়। এসব কথা বলতে বলতে চোখে পানি এসে যায় কাশেমের। এসব কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুনার মা।

প্রেমের মোহ এখনো জাল বিছাতে পারেনি রুনার হৃদয়ে। এভাবে কাটছে দিনক্ষণ। ভালোবাসা, মমতা, ছোট থেকে বড় হওয়া এসব কিছু এখনো প্রেম নামের কাঁচের দেয়াল ভাঙ্গতে পারেনি । প্রেম নয় বিয়ের আকুতি তা কে শোনে? পরিবারের কথা ভেবে নিজে নিজেই স্বপ্নপুরুষকে আসতে বাঁধা দেয় তার স্বপ্নের রাজ্যে।

পরক্ষণেই ভাবতে থাকে যদি কোনো প্রতিবন্ধীর সাথে বিয়ে হতো, যাদের ঘরে দু-বেলা দু-মুঠো ভাত খেয়ে বাবা-মা, বোনকে আমার বোঝা থেকে দায়মুক্তি দিতে পারতাম, অন্তত বেঁচে যেতো আমাদের পরিবার।

প্রতিদিন ঘুমের সময় পাশের ঘরের দম্পতির প্রেমালাপ শোনে রুনা, হয় মৃদু হাসি, চিৎকার, তার গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায়, নতুন আসা যৌবনে রুনা উৎসুক হয়, বালিশের একোণ ধরে ওকোণ ছাড়ে, অজানা কোনো স্বপ্নপুরুষ মনে করে চিপে ধরে! লন্ঠনের ঝাপসা আলোয় দম্পতির গাঢ় হয় প্রেম, এদিকে রুনা খাঁচায় বন্দী ময়নার মতো ছটফট করে। একদিকে পরিবারের মুক্তির কথা অন্য দিকে তপ্ত যৌবন।

আজকের সকালটা অন্য দিনের মতো নয় রুনার জীবনে, অবুঝ যন্ত্রণার দৃষ্টি যেন তাকে চেপে বসেছে। সকাল-সকাল চোখে চোখ পড়ে গেলো বাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মাতববরের ছেলের দিকে। মাঝে মাঝেই তার দাঁড়িয়ে থাকা দেখত কিন্তু আজকে দাঁড়িয়ে থাকাটা কেন জানি ভিন্ন মনে হয় তার। তবে কি সে আমাকে এক পলক দেখার জন্য এখানে দাঁড়িয়ে থাকে?

এভাবে দৃষ্টিতে দৃষ্টি, মাঝে মধ্যে দু-একটি কথা, কেটে গেলো সাত-আট মাস, চোখের সামনেই বড় হলো ঘুমন্ত সম্পর্ক, রুনা সে বুঝতে পেরেছে, সাহসটা হয়নি নিজ গুণে, কোনো দিন হয়তো রুনাও দেখেছে তবে তার বলা কঠিন হবে যে, ছেলেটা কোনো কিছু ইঙ্গিত করেছে না, কোনো দিন! নেহাত-ই সে ভালোবাসে!

পরদিন যখন সকাল সকাল পুকুর পাড়ে দাঁড়ায় তখন মাথা একটু নিচু করে রুনাকে সামনে এসে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত করে, পাশে এসে জানিয়েও দেয় রুনা তোমাকে আমি ভালোবাসি, তোমাকে বিয়া করতে চাই!” রুনা আশ্চর্য হবে কি রাগ হবে, কি লজ্জাবোধ করবে, নাকি দৌড়ে পালাবে ভেবে পায় না, শুধু মুখের দিকে তাকিয়ে চোখের কোণ বেয়ে অশ্রু ঝরায়!

রুনার অন্তর যে কেঁদেছিল পাহাড়ের কান্নার মতো, সাগরের মত নিরব-নিথর হয়েছিল তা বুঝতে অসুবিধে হয়নি! একফোঁটা পানি চোখ থেকে খসে পরে আর এক একটা প্রশ্ন ভুজঙ্গ তীরের মতো এসে তার বুকে বিঁেধ! -আমার কি বিয়্যা হইবো? অস্থির হৃদয়, চারদিক স্তব্ধ। স্তব্ধতায় যেমন ঘড়ির কাঁটার শব্দ শোনা যায় টিক্… টিক্…ঠিক তেমনি তার চোখের জল পরছিল স্বশব্দে টপ্… টপ্…টপ্…। এ জল আসলে রুনার ভালোবাসা পাওয়ার আনন্দে নয়, এ জল রুনার পরিবারকে মুক্তি করার জল।

–চলবে

সর্বশেষ - গল্প