অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ এ আসছে রিক্তা রিচি’র কাব্যগ্রন্থ “রোদের গ্রাফিতি বোঝে না রক্তাক্ত বুলেট”। অগ্রদূত অ্যান্ড কোম্পানি প্রকাশনীর বইটি বইমেলার ৬২৮-৬২৯ নম্বর স্টলে পাওয়া যাবে। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন রাহুল বিশ্বাস। শুভেচ্ছা মূল্য রাখা হয়েছে ২০০ টাকা।
চার ফর্মার বইটিতে রয়েছে ৫২টি কবিতা। প্রতিটি কবিতায় রয়েছে গভীর জীবন দর্শন। সমসাময়িক বিভিন্ন অসঙ্গতি ও আমোঘ সত্যকে উপমা, প্রতীক ও ইঙ্গিতের আঁচে সুস্পষ্ট করে তোলা হয়েছে। বইটিতে রয়েছে দ্রোহ, বিষাদ, প্রেম ও কামের কবিতা। রয়েছে আত্মাকে শুদ্ধ করার আহ্বান। মোটকথা সমাজ-বাস্তবতা-ব্যক্তি জীবনের কোমল ও কঠোর বয়ানও রয়েছে।
“রোদের গ্রাফিতি বোঝে না রক্তাক্ত বুলেট” বইয়ের সংক্ষিফ্ত কথা: রোদের গ্রাফিতি বোঝে না রক্তাক্ত বুলেট, রোদের গ্রাফিতি কেন, বুলেট আসলে কিছুই বোঝে না। তারপরও অবুঝ বুলেট আর নির্বোধ রোদ কেন কবিতার বিষয় হয়ে ওঠে? কখন-ই-বা ওঠে? তখনই ওঠে, যখন সোজাসাপ্টা বলা যায় না অমোঘ সত্যকে। তখন আশ্রয় নিতে হয় প্রতীকের। ইঙ্গিতে বলে যেতে হয় নির্জলা সত্য। বিমূর্ত রঙে-রেখায় এঁকে যেতে হয় রূঢ় বাস্তব। কবি রিক্তা রিচি কি সেই চিরকালীন পথেই হাঁটলেন? কবুল করতে দ্বিধা নেই, আমরা এখন এক বুলেটবিদ্ধ সময়ে বাস করছি।
এই সময়ের বাসিন্দা হয়ে যে ভাষায় কাব্যচর্চা করা উচিত, রিক্তা রিচি ঠিক সেই ভাষাটিই রপ্ত করেছেন। কবির তৃতীয় কাব্যগ্রন্থখানি তাই ভরে উঠেছে ইঙ্গিতময় ভাষার ফুলে ও ফসলে। এর পাতায় পাতায় ঝরা-শিউলির মতো ছড়িয়ে আছে অজস্র ইঙ্গিতময়তা। সে ইঙ্গিত কখনো প্রেমের, কখনো কামের, কখনো দ্রোহের, কখনো করুণ, কখনো কঠোর।
অতএব বলা যেতেই পারে, কোমল-কঠোরের অবিমিশ্র অনুভূতি দুই মলাটে বাঁধা পড়েছে এখানে। এই মলাট খোলার সময় এখন আপনার, প্রিয় পাঠক। মলাট খুলে প্রবেশ করুন ‘রোদের গ্রাফিতি বোঝে না রক্তাক্ত বুলেট’-এ, আর স্নান করুন কাব্যধারার পবিত্র জলে। কবি রিক্তা রিচি’র ইঙ্গিতময় কাব্যভাষা, প্রতীকধর্মী ব্যঞ্জনা, অনুভূতির নিটোল বয়ান আপনার বোধকে নাড়িয়ে দেবে, পরিশুদ্ধ করবে নিঃসন্দেহে। কবিতার কাজ নিছক বিনোদন-বর্ষণ নয়, আত্মাকে শুদ্ধ করা—তাই নয় কি?
পাণ্ডুলিপির কবিতা
অভিমান জমে থাক রাতের ত্রিভুজে
তোমাকে কতদিন দেখি না। নক্ষত্রের ট্রাঙ্কে দুঃখগুলো জমা দিলাম। তারপরেও তোমাকে দেখিনি।
অভিমানে ঝরে পড়ে কত ফুল, কত তারা নিভে যায় রাতের ত্রিভুজে।
কতশত ঝর্ণারা করে আত্মদহন। কত নদী নীরবে চোখ মুছে।
পরেও তুমি ধরা দাওনি। তোমাকে দেখিনি। অভিমানগুলো খসে খসে জল হয়, জল ঝরে সমুদ্রের লোনাজলে।
অভিমান আলগোছে জমে থাক রাতের ত্রিভুজে।
বিষাদের দ্রাঘিমারেখা
কেবল জল জানে বিষাদের দ্রাঘিমারেখা।
ব্যথাগুলো কাপড় তো নয়, সুই-সুতায় সেলানো যাবে।
কাদা মাটিও নয়, যা রোদের তাপে শুকিয়ে যাবে।
মস্তিষ্কের ভীষণ ক্ষুধা
মস্তিষ্কের ভীষণ ক্ষুধা
পিয়াসে ফেটে চৌচির প্রান্তরের মতো
চাই গলা ভেজানো দুধ চা আর নবাবি লেক্সাস বিস্কুট।
মাঝে মাঝে পেয়ালা ভরা সবুজ চায়েও ভেজে ঠোঁটের গণিত।
নদীর ঢেউ জানে মস্তিষ্কের নামতা, সূত্রের সকল মিছিল।
শুধু আমি ও আমরা বুঝি না, চিনি না হৃদয়ের রাসুল।
রোদের বোবা নিউরনও বোঝে কামুক ঠোঁটের ভাষা, পাটখড়ির মতো চড়ুইও জানে আমার ক্ষুধা।
জানে ঘাটে বাঁধা ডিঙি, লেকে চড়া বোবা বোট ও শাদা কবুতরের ঝাঁক।
মস্তিষ্কে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে বেঁচে আছি,
আর হৃদয়ে পাথর
ভুলে গেছি জীবন, প্রেম স…ব
পাঁচ কোটি বছর তোকে না দেখার আর্তনাদে
মুছে গেছে চোখের সোনালি আলো।
এখন, আমি আর দিন দেখি না।
দেখি তুই ও তোদের দূষিত বিবেক।
দেখি নিভে যাওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক মোম।
রোদের গ্রাফিতি বোঝে না রক্তাক্ত বুলেট
যার হাসিতে বার্ধক্য কেটে যায়, কেটে যায় আধারের বেণী
যার হাতের পরশে সোনা ঝরা রোদ দেয় স্বর্নালী ফসল।
তার আত্মা-ই অকালে উড়ে যায় জীবনের ওপাড়ে!
সে অথবা তারাই হয়ে যায় লাশ!
প্রিয় মা! আমি কি তবে লাশের মিছিলে সুখ খুঁজে নেব?
আমি কি তবে ধ্বংসের বুকেই বানাবো বালির প্রাসাদ?
এখানে রোদের গ্রাফিতি বোঝে না রক্তাক্ত বুলেট,
মুখোশ পড়া শকুনেরা বোঝে না তাজা প্রাণের সুমিষ্ট হাসি।
এখানে সকালের আহার হয় তাজা রক্তের দগদগে দাগ কিংবা
ধর্ষিতা মেয়ের শকুনে খামচানো শরীর, অথবা ছেলে হারা মায়ের চোখের বাধভাঙা সমুদ্রের ঢেউ।
কার কাছে হৃদয়ের বোতাম খুলে দেব! কার কাছে ভিক্ষে চাইব কচি প্রাণ রক্ষার?
কার কাছে নালিশ করলে দেখতে হবে না মৃত্যুরাজ্য,
কোথায় গেলে দেখতে হবে না এমন লানত বলতে পারো?