মঙ্গলবার , ৬ অক্টোবর ২০২০ | ৯ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
  1. article
  2. Artist
  3. কবিতা
  4. কলাম
  5. গল্প
  6. গুণীজন

মৌমিতার ভালবাসা (পর্ব – ২)

প্রতিবেদক
রুদ্র আমিন
অক্টোবর ৬, ২০২০ ১১:১১ পূর্বাহ্ণ

গতপর্বে যা ছিলো — মৌমিতার ভালবাসা (পর্ব – ১)
তানিম এটা কি তুই তোর আপুর গল্প বলে যাচ্ছিস? হু, তার জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনা, এতোটুকু আমি তার ডায়েরী থেকে পড়েছি সেসময়। তো যদি সত্যিই মনযোগ সহকারে শুনতে চাস তাহেল বলতে পারি, শেষ মূহুর্তে বলতে হবে ভালোবাসা কারে কয়। আমাদের মনে হচ্ছে তোর বয়সটা তখন একটু ভার হলে তুই প্রেমে করতি, তোদের মিথ্যে বলতে পারব না দোস্ত, তোদের কথা ঠিক বলেই হ্যা বলছি। শুধু আমি নই, তোরাও যদি দেখতি এবং আমার মত স্পর্শ পেয়ে থাকতি তবে তোরাও আরও বেশি পাগল হয়ে পাগল বনে বসবাস করতি। ঋতু’র জন্য তো দেখি মির্জা যায় যায় আর তুই সুমনা, কিন্তু দেখ আমি এখনও কাউকে পেলাম না, পেলেও মনের মতো হয় না। শালা তোর দৃষ্টি তো তোর আপু নষ্ট করে দিয়েছে, মির্জা কথার মাঝে গান ধরেছে, “চোখ যে মনের কথা বলে, চোখে চোখ রেখে মনে হয়, চোখের ভাষা বুঝতে হলে, চোখের মতো চোখ থাকা চাই”। দোস্ত এটা কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে, না বেশি হবে কেন তোর মনের কথা তো আমাদেরও মনের কথা, তাই নয় কি। এবার বল তোর আপুর সাথে তার প্রেমিকার প্রথম দেখা কিভাবে ঘটেছিল?

যে কোনো মানুষের জন্য প্রথম পরিচয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রথম পরিচয়ের সময়ই ওই ব্যক্তি সম্পর্কে আমাদের মনের মধ্যে একটা ধারণা তৈরি হয়ে যায়, যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব মৃত্যু পর্যন্ত চলমান। যেমন কিছু মুহূর্ত মানুষের জীবনে এমনভাবে দাগ কেঁটে যায় যে হাজার চেষ্টা করলেও তা মোছা যায় না…. মৌমিতার জীবনেও ঠিক এমন ভাবে দাগ কেঁটে আছে ২০১০ সালের কোন একদিনে যা আজও তাকে কুড়েকুড়ে খেয়ে চলেছে…

প্রতিদিনের মতো সেদিনও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ মৌমিতার, কিছু বই ভর্তি ব্যাগ এক কাঁধে করে নিয়ে বাসা থেকে বের হলো, বাস স্টপিজে বাসের অপেক্ষায় সে, একটা সময়ে বাস পেয়ে বাসে চড়ে বিশ্ববিদ্যালয় পৌছে গেল সে, নির্ধারিত ক্লাশ শেষ করে বাড়িতে ফেরার প্রস্তুতি ক্যাম্পাস সংলগ্ন রাস্তায়, বাস এলো, বাসে চড়ে প্রতিদিনের মত আজও নিরাপদে বাড়ি পৌছে গেল সে।

ঘরে ভেতর পায়চারি করে চলেছে, কেন যেন আজ বিকেলটা মৌমিতার ভালো লাগছে না, আকাশটা মেঘলা মেঘলা, মনে হচ্ছে ঝড় আসবে কিংবা অঝরধারায় বৃষ্টি নামবে মাটির বুক চিরে, এমন সময়ে মৌমিতার মা ঘরে প্রবেশ করলেন, কিরে মা, তুই এমন করে ঘর জুড়ে পায়চারি করছিস কেন, কোন সমস্যা হয়েছে তোর? না মা, তেমন কোন সমস্যা হয়নি, কেন জানি ভালো লাগছে না আজ। যা জয়াদের বাসা থেকে বেড়িয়ে আয়, দেখবি ভালো লাগবে, তোরা একই বয়সী কিন্তু জয়ার বিয়ে করে সংসার করছে বছর হতে চলেছে, আজ জয়া বাসায় এসেছিল, আজ তো জয়ার জন্মদিন, তোকে যেতে বলেছে, তুই গেলে ওর ভালো লাগবে আর তোরও মন ভালো হয়ে যাবে। তখন যেতে বলেছে মা? তোর জন্য কি ওর কোন সময় ঠিক করা থাকে, তুই যখন যাবি তখনি তোর জন্য দরজা খোলা, না, আমি যখন তখন যাই না কারণ জয়া আজ সেই জয়া নয়, ওর সংসার হয়েছে, স্বামী আছে, আমি এক্ষণি বের হয়ে যাবো, তুমি যাবে মা আমার সাথে? না মা তুমি যাও।

ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে মৌমিতা ভাবতে থাকলো প্রতিবারে মতো এবারও জয়ার জন্মদিনের কথা ভুলে গেলাম, দিনে দিনে আমি কোন পথে হাঁটছি, কেন ভুলে যাচ্ছি আমার প্রিয়জনদের কথা, সময় নষ্ট না করে মৌমিতা জয়াদের বাড়িতে চলে গেল, অনেকটা সময় ব্যয় করে সে সেখানে।

সকাল সকাল ক্লাসে যেতে কি মজা লাগে কারও। তবুও যেতে হয়। শত কষ্ট হলেও যেতে হবে কেননা আজ ক্লাসে গুরুত্বপূর্ন একটা ক্লাস আছে। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে গেল মৌমিতা। ৯ টা বাজে, রাস্তায় এসে দেখল রাস্তা ঘাট আজ কেন যেন অন্যান্য দিনের কথা বলছে না, অনেকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে, অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর গাড়ি অপেক্ষা শেষ, রাস্তাঘাট এত ফাঁকা কিন্তু গাড়ির আসন তো ফাঁকা নেই, পিছনের একটি আসন ফাঁকা পেয়ে সেখানে বসে পড়ল সে। গাড়ি চলছে হঠাৎ বিকট শব্দে স্তব্ধ কান, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের মতো দৃষ্টিশক্তি, ঘোর কেটে গেলো আহাজারি আর কান্নায়, চারপাশে হৈচৈ, মনে হলো বিড়বিড় করে কপাল বেয়ে কি যেন নামছে, হাত বাড়িয়ে কপাল স্পর্শ করে হাতের তালুতে দেখতে পেলাম বিরবির করে বয়ে চলা অন্য কিছুই নয়, নিজের রক্ত, সামনের আসনে বসা একটি মেয়ে গোঙ্গাচ্ছে, নিজেকে সামলিয়ে মেয়েটিকে নিয়ে গাড়ি থেকে বের হলো অচেনা এক যুবক, উদ্ধারকারী এ্যাম্বুলেন্স হতাহতদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত, মৌমিতাকে নিয়ে হাসপাতালে চলে গেলেন, তাঁর অনেকটা রক্তক্ষরণ হয়েছে বলে ডাক্তার রক্ত সংগ্রহ করতে বললেন, অচেনা অজানা সেই যুবক নিজের শরীরের রক্ত দিয়ে মৌমিতাকে সারিয়ে তুললেন।

সুস্থ হয়ে যখন হাসপাতাল থেকে সে বাসায় ফিরবে, ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করল, আমাকে এখানে কে ভর্তি করেছিল বলতে পারবেন? ডাক্তার বললেন আপনার বাসের এক যাত্রী যিনি আপনার পিছনের আসনে বসেছিলেন, মৌমিতার দৃষ্টিতে সেই যুবকের অবয়ব ভেসে উঠলো, ডাক্তার আরও বলেন, ছেলেটি যদি ঐ সময়ে আপনাকে নিজের শরীরের রক্ত না দিতেন আপনাকে বাঁচানো সম্ভব হতো না, সে অসুস্থ থাকা অবস্থায় জোর করেই দুই ব্যাগ রক্ত দিয়েছিলেন। বলতে হবে সত্যি আপনার কপাল ভালো এমন একজন মানুষ আপনার পাশের সিটে বসে ছিলেন।

চলবে ….