গতপর্বে যা ছিলো — মৌমিতার ভালবাসা (পর্ব – ২)
আচ্ছা দোস্ত সত্যিই আপুর জীবন কাহিনী বেশ ভালোই বলতে হবে, এমন মানুষ সত্যিই কয়জনের কপালে জোটে, তারপর কি হয়েছিল বল আমরা শুনতে চাই, আর কখন তার সাথে শেষ দেখা হয়েছে।
এরপর কেটে গেছে অনেকদিন, আপুর নিয়মিত রুটিন হয়েছিল সেই বাসস্টপ থেকে বাসে চড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া, সময়টাও ঠিক সেই একই সময়, যেন আপু তাকে দেখতে পান, কিন্তু না, চলতে চলতে কেটে গেছে আরও ছয় মাস…
সেদিন মুরাদ কাজের উদ্দেশ্য দোকান থেকে বের হয়েছে, তার চলাফেরার মাঝে যে বিড়ম্বনা হতো সেখান থেকেই শুরু করি, অনেক সময় পরিচিতদের মাঝে বেশ ঝামেলায় পড়তে হতো মুরাদের। যেমন কোন রিকসা স্টা›েডর রিকসাওয়ালাদের নিয়ে, মুরাদ ভেবে উঠেতে পারছে না কোনটা থেকে কোনটা বেছে নিবে, কোনটায় উঠবে আর কে মন খারাপ করে বসে থাকবে। সবাই ডাকে সবাই মুচকি হাসে। অনেক সময় রিকসায় না চড়ার অভিনয় করে দাঁড়িয়ে থাকি, সর্বশেষ রিকসায় উঠি। কারণ যেতে তো হবে গন্তব্যে। আজকেও তার কোন ব্যতিক্রম হয়নি।
ছোট একটা ছেলে স্কুল ড্রেস পড়া হাতে চায়ের ফ্লাক্স, পলিথিনে কয়েক প্রকার বিস্কুট। অনেক সময় এগুলোকে হার্ডওয়ার খাবার বলে থাকে সে, এখনও বলে। যে কাজের সাথে জড়িত সেখানে প্রায় সময় এমন হার্ডওয়ার খেয়ে দুপুরের ক্ষুধার যন্ত্রণা মাটি চাপা দিতে হয় তাঁর। তবে আজ সে রকম নয়। প্রায় সময় ছেলেটিকে দেখে। ছেলেটি খুব মিষ্টি, নাম সেই প্রথম পরিচয়ে জানা। যেমন মিষ্টি ছেলেটা তেমন মিষ্টি তার নাম, অর্ক। মাথায় হাত বুলিয়ে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতেই সে বুঝে নিয়েছে আমি কি চেয়েছি। যে ছেলে প্রথম দিনেই ধরতে পেরেছে তাকে অবশ্যই মেধাবী এবং চালাক বলতেই হবে। সিগারেটের সাথে ম্যাচ। পকেট থেকে টাকা দিয়েই রিকসায়। আর রিকসায় উঠে আলতো করে ঠোঁটে রেখে জাহান্নামের আগুন ধরিয়ে দিলো টান। রাজলক্ষ্মী এসে কিছুক্ষণ গাড়ি নির্বাচন করতে হলো তাঁর। এটা নিত্যদিনের অভ্যাস। আর এজন্য মুরাদ প্রায় সময় বিআরটিসিতেই চড়ে গন্তব্যে পৌছানোর চেষ্টা করে। আর এর অন্য আরেকটি কারণও আছে। দোতলায় প্রায় সময় বসার আসন খালি থাকে। আর অন্যান্য গাড়িতে দাড়িয়েই যেতে হয় পুরোটা পথ।
মুরাদ মনে মনে বলতেছিল, আজকে কেন জানি বনানীর উদ্দেশ্যে উত্তরা থেকে বেঙ্গল মটরস্ গাড়িকে ঠিক করেছি, সে ভাবতেই পারছে না। মনে হলো তাই উঠে পড়লাম। উঠে তো ভালই লাগছে তাঁর এখনো পূর্ণ হয়নি প্রত্যেকটি আসন, গাড়ির একটি আসন ফাঁকা পড়ে আছে। কেন জানি অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ গাড়িতে যাত্রী সংখ্যা খুব বেশি নয়। যে হারে যাত্রী গাড়িতে উঠে দাঁড়িয়ে যায় সেরকম নয়। এমনটিই বলতে ছিল মুরাদ।
মুরাদ গাড়ির তিন আসনের সিটটিতে বসে পড়ল, গাড়ির ঠিক মাঝামাঝি। ডান পাশে আরেকজন ভদ্র মধ্য বয়সী মহিলা বসা আছে, ইচ্ছে করে তার সাথেই বসে পড়লাম। ডান পাশের জানালা ঘেষে বসে আছেন আমার থেকে দেখতে অনেক সুন্দর এক যুবক। মুখে খোচাখোচা দাড়ি। ফর্সা মানুষের অবশ্যই এমন মুখভরা দাড়ি থাকলে বেশ ভাল লাগে। বয়সে মনে হচ্ছে আমার ছোটই হবে। আড়ে আড়ে একবার চেয়েও নিলাম।
রাস্তায় হালকা জ্যাম লেগেই আছে এটা যেন জন্মসূত্রে পাওয়া বাবার সম্পত্তি। এ নিয়ে চিন্তার কোন কারন নেই। ঢাকা শহর মানেই জ্যামের শহর। জ্যাম ছাড়া ঢাকা শহর ঠিক পল্লীর মত মনে হয়। রাজলক্ষ্মী থেকে এয়ারপোর্ট বিশ মিনিট লেগে গেলো।
এয়ারপোর্ট বাস কাউন্টার এসে দাঁড়াতেই সারিসারি মেহগনি গাছের মতো দাড়িয়ে আছে হাফ সেঞ্চুরির মতো জনতা। এর অর্ধেক ইউনিভার্সিটি আর কলেজ পড়ুয়া এক একজন ইরানী মডেল মনে হচ্ছে। আগে এমন সুন্দর মেয়ে মানুষ খুব কম দেখা যেতে। দিন বদলের হাওয়ায় যেন বাহিরের সুন্দরের হাট বসেছে পৃথিবী জুড়ে। অবশ্যই তাদের জন্য এমনটা প্রাপ্য। আগের দিনে মেয়ে মানুষের সাথে অনেক অন্যায় অত্যাচার করা হতো। বর্তমানে যে করা হচ্ছে না তা নয়। সংসারের প্রথম সন্তান মেয়ে মানেই হলো ঐ সংসারের আল্লাহর রহমত বেশি। এয়ারপোর্ট এসে আমার পাশে বাসা আসন দুটি শূন্য হয়ে গেল, জানালা ঘেষে ডান পাশে বসে রইলাম।
যাই হোক সত্য কথা বলতে কি সুন্দরের পূজারি আমরা সবাই। অন্ধরা শরীরের ঘ্রাণ শুকেও আজকাল বলে দিতে পারে এমন সুগন্ধি কত বয়সের নারীর হতে পারে। স্বপ্নের মাঝে বিভোর হয়ে যায় আর আফসোস করতে থাকে। এমন আফসোস কে করে না, এমন আফসোস কি আমি করি না?
সেটার একমাত্র উত্তর যদি এমন কেউ একজন হাতটি ধরে বলতো চলো আমরা দুজন হারিয়ে যাই দূর অজানায়। চোখ বন্ধ করে মাথাটাকে ১১০ ডিগ্রী এঙ্গেল করে সম্মতি দিতাম। মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলতাম আর হয়তো অঙ্গের ইশারা সবচেয়ে আগে প্রকাশ পেতো। প্রথমত দৃষ্টির কথাই বলবো।
চলবে….