গতপর্বে যা ছিলো — মৌমিতার ভালবাসা (পর্ব – ৩)
একে একে প্রায় সবাই গাড়িতে উঠেছে। সকল আসন ভরা, ফাঁকা পড়ে আছে শুধু আমার মাঝের আসনটি। মনে মনে ভাবলাম যাক বেঁচে গেছি এখনকার মতো এই আসনের কোন মালিক নেই। অন্তত খিলক্ষেত পর্যন্ত আরামে যাওয়া যাবে। গাড়ি সবেমাত্র চলতে শুরু করেছে, কিছুদূর এগিয়ে এসেছে গাড়ি, কেন জানি আবার থেমে গেল গাড়ি। মনে মনে ভাবতে থাকলাম গরীবের সুখ কপালে সয় না। কেউ একজন যেন গরীবের সুখ নষ্ট করতে চলে এসেছে। কি সুন্দর চেহারা ইরানী নয় যেন মিসরীয়। কোথায় হারিয়ে গেছি বলতে পারবো না। স্বপ্ন কি সত্যি হয়?
ভাই আপনি একটু ভেতরে যাবেন? কথাটি দুইবার উচ্চারণ করার পরও যেন মুরাদ কথাগুলো শুনতে পায়নি, এবার জোর গলায় বললেন ভাই আপনি একটু ভেতরে যাবেন আমি বসবো। ঘোর কেটে যাওয়ার পর দেখা গেল বাসের অন্যান্য যাত্রীরা আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। তিনি নাকি দু’তিন বার আমাকে এমন কথা বলেছেন। হঠাৎ করে ছেদ কেটে গেল, চোখে যেন সরষের ফুল দেখছি। একি এ এখানে কেন? কল্পনা কি বাস্তবে পরিণত হয়?
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললাম, আপনি ভেতরে গিয়ে বসুন, আমার গন্তব্য বেশি দূরে নয়, আপনি তো বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন, এবার সে কোনো জবাব দিচ্ছে না, আবার তাকে বলা হলো, সে বললো না, আমি আপনার বা-পাশেই বসতে চাই, আপনি পুরুষ মানুষের বাম পাশে বসবেন কেন? পুরুষের বাম পাশে বসার মানে জানেন? আপনি ভেতরে বসেন। আমি বাহিরেই থাকবো। আমার গন্তব্য খুব দূরে নয়। বারবার কষ্ট দেয়ার থেকে একবার কষ্ট দেয়া অনেক ভাল। সবাই মুক্তি দিয়েছে কিন্তু নাছোড় বান্দা সে তো আমায় মুক্তি দিচ্ছে না।
দেখেন এতো কিছু ভাবার সময় নাই, ঘন্টা খানেক দাঁড়িয়ে ছিলাম, কোমর ম্যাজম্যাজ করতেছে। সরবেন নাকি আপনার কোলে বসে পড়ব। এমন কথা জীবনেও কেউ আশা করে না, মুরাদের ক্ষেত্রে ঠিক তাই, মুরাদ যেন লজ্জাবতী লতার মতো নুয়ে গেল, মেয়েটির কথা শুনে অনেকেই হাসছে, আর আমি মাথা উঁচু করতে পারছি না।
তন্ময় তোর আপু দেখি সাংঘাতিক মেয়ে মানুষ, বাসের ভেতর কত মানুষের অবস্থান, আর সেখানে এভাবে বলতে পারল, দোস্ত কি আর বলব বল, সে তো সেদিন থেকেই পাগল হয়ে আছে, প্রেমিকাকে কাছে পাওয়ার আকুলতায় তার আচরণ এমনটাই হওয়ার কথা তাই নয় কি? তারপর বল, বেশ ভালো লাগছে, মজা তো এখান থেকেই, তাদের কথোপকথন শুনতে থাক।
একরকম বাধ্য হয়েই বা-পাশে বসতে দিল মুরাদ। দুনিয়ায় এতো মেয়ে মানুষ দেখেছি এমন মেয়ে আজকেই প্রথম দেখতে পেলাম। চুপ হয়ে গেলাম কিছুক্ষণের জন্য। হারিয়ে গেলাম স্বপ্নের রাজ্যে যেখানে রাজকুমারী থাকে। এভাবেই ভাবতেছিলাম স্বপ্নের জীবন নিয়ে। হঠাৎ বিকট শব্দে সজাগ হলাম। মনে হলো যেন বজ্রপাত আমার দুই কানে প্রবেশ করেছে। সকল চিন্তার অবসান।
কি, আপনার সমস্যা কি? কোথায় উড়ে যান মাঝে মাঝে? কিছু বললেই দেখি চমকে উঠেন। রাস্তা ঘাটে স্বপ্ন দেখে বেড়ান নাকি? এমন স্বপ্ন আমাদের কিছু ধার দিতে পারেন, যেন আমরাও স্বপ্ন দেখতে দেখতে বর্তমানের কোলাহল হারিয়ে যাই, স্বপ্নে মানুষ হৃদয়ে মোচড় দেয় এটা জানি কিন্তু আপনার দেখি আলাদা দিনের বেলায় চলন্ত গাড়িতে স্বপ্ন দেখেন। যাই হোক এতো বগবগ করতে পারব না, এরমাঝে অনেক কথাই বলে ফেলেছি। সবাই আবার হকার ভাবতে পারে।
আচ্ছা আপনি আমাকে কি জানি জিজ্ঞেস করছিলেন? কই, কখন আপনাকে কি আবার জিজ্ঞেস করলাম, কেন? বা-পাশে বসা নিয়ে, ও মনে পড়েছে পুরুষের বাম পাশে বসতে নেই। পুরুষের বাম পাশে নারীর বসার রহস্য কি? সেটা আমি ভাল করেই জানি এবং সে বুঝার ক্ষমতা আমার খুব ভাল। প্রতিটি নারী এমন দিনের অপেক্ষা করে। আমিও করি। আপনি যতটুকু বুঝেন আমি ঠিক তার থেকে বেশি বুঝি। অনেক সময় নষ্ট করেছি ভাবতেছি আর কোন সময় নষ্ট করা যাবে না, আর কাউকে স্বপ্নের ফ্রেমে আটকিয়ে স্বপ্ন দেখতে চাই না, সেহেতু আজ আর মিস করতে রাজি নই। আপনার কথার মানে বুঝতে পারলাম না। “আজ আর মিস করতে রাজি নই ” এর মানে কি?
আপনার এতো কিছু বুঝার প্রয়োজন নেই। আমার যা বুঝা আমি তা বুঝে গেছি। অধিকার আদায় করেই নিতে হবে, এটাই বর্তমান সমাজ ও দেশে নিয়ম বলে জানি, কিসের অধিকার, কার অধিকার? মনে মনে হায় আল্লাহ আজ কোন পাগলের পাল্লায় ফেললে আমাকে।
কি আপনি একা একা বিড়বিড় করছেন কেন, কি সমস্যা আপনার? আমি কিন্তু পাগল নই। আমি সম্পূর্ণ সুস্থ। শুনুন, আমি সরাসরি কথা বলতে শিখেছি। যখন বলতে পারিনি তখন খুব কষ্ট করতে হয়েছে। অনেকটা সময় হারিয়ে ফেলেছি, অনেকে খুব কম সময়ের ব্যবধানে ভুলে যায় অন্যকে কিন্তু আমি ভুলতে পারিনা, এজন্য যে কষ্ট সহ্য করেছি সেটা আপনি বুঝবেন না, তবে এবার আর নয়, প্রতিজ্ঞা করেই বাসা থেকে বের হই প্রতিদিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্লাসও মিস করি নিয়মিত। এসবের কারণ একটাই। আগের ভুল শুধরে নেওয়ার। জানেন তো একই ভুল বারংবার করার মানে, আপনি তো অনেক মানে জানেন।
— চলবে