বুধবার , ৪ নভেম্বর ২০২০ | ৮ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
  1. article
  2. Artist
  3. কবিতা
  4. কলাম
  5. গল্প
  6. গুণীজন

ট্রেন – ৪৭৪ (একটি হরর গল্প) পর্ব-১

প্রতিবেদক
রুদ্র আমিন
নভেম্বর ৪, ২০২০ ১২:১২ অপরাহ্ণ

আজ সকালেই ঢাকায় পৌছলাম, বিগত ছত্রিশ বছর ধরে মানসিক রোগীদের চিকিৎসা করতে করতে অনেকটা মানসিক রোগী নিজেই হয়ে গেছি, আমাদের চিকিৎসা ক্ষেত্রে এই বিভাগটা ওষুধ এবং যন্ত্রের চেয়ে বেশি খরচ করতে হয় কৌশল, রোগীদের তথ্য গুলো, ইতিহাস, বংশ জাতি এবং তাদের বংশের জন্ম মৃত্যুর ইতিহাস ইত্যাদি খুব সুক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। আমেরিকান জীবনে মানসিক রোগীর চিকিৎসার ফাঁকে দেশের জন্য নিজেই মানসিক কষ্টে ভুগতাম, আজ আমার কিছু ছাত্র বর্তমানে এ দেশে অধ্যাপনা করছে, তাদের একজন ফজলে এলাহী আমার কাছে এক নতুন তথ্য দিয়ে গেলো, সেও এ বিষয়ে অনেক খাটাখাটনি করে, কোন সমাধান পাচ্ছে না, এটা নেত্রকোনায় পড়েছে, এলাহী আমাকে সেখানে যাবার সব ব্যবস্থা করে রেখেছে, অবশ্য বিষয়টা ইটারেষ্টিং কেইস হওয়ায় আমি আগ্রহ দেখিয়েছি।

ঢাকা থেকে ট্রেনে চেপে নেত্রকোনার এই হরিপুর ষ্টেশনে পৌছাতে প্রায় সন্ধে ছুই ছুই, এখানে আমাকে পরাণ মাষ্টার নিতে আসার কথা, কিন্তু অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর, এলাহির দেওয়া বর্ণনা মত কোন মাষ্টার কে খুঁজে পেলাম না, হঠাৎ পেছন থেকে একজন আদাব বলতেই, ফিরে দেখি এক মুরং যুবক দাঁড়িয়ে, কিন্তু সে তো পরাণ মাষ্টার না, জিজ্ঞেস করলাম তাকে, কে তুমি, কি চাও, সে আবার হাত জোড় করে বললো আদাব বাবু, আমি গাড়োয়ান হরি, তোকে নিতে পরাণ বাবু আমাকে পাঠিয়েছে, রেল অপিসের বাইরে হামার মহিষের গাড়ি আচে বাবু, তোর ব্যাগ পোটরা আমাকে দে, আমি লিয়ে যাচ্ছি, এতক্ষণে বুঝা গেল, পরাণ মাষ্টারই হয়তো ওকে পাঠিয়েছে, সন্ধ্যা প্রায় আসন্ন, তাই ওর সাথে আর কথা বাড়ালাম না, ষ্টেশনের বাহিরেই ওর গাড়ি দেখতে পেলাম, বেচারা হরি হালকা গড়নের হলেও তাঁর শরীরে ভালই জোর দেখছি, আমার ব্যাগ, লাগেজ, বইয়ের দুটো কার্টুন সবাই এক সাথেই গাড়িতে রাখলো, গাড়ির সামনে যে মহিষ গুলো বাঁধা সেগুলো বেশ তাগড়া মনে হচ্ছে, মনে মনে এলাহি কে ধন্যবাদ দিতে হয়, অনেক বছর পর এমন একটা বিশেষ গাড়িতে ভ্রমণ উপভোগ এর ব্যবস্থা করে দেওয়া জন্য।

রেল ষ্টেশন ফেলে, আমরা এখন গাঁয়ের পথে, এখন এটাকে গ্রাম বলা যায় না, পথের দুপাশে নলখাগড়া, কাশবনের ছড়াছড়ি, দূরে দুইচারটা ঘরে মিলে ছড়ানো ছিটানো বসত, কিছুক্ষণ পর পরই একটা খাল পার হতে হচ্ছে, দূরে বনভূমি দেখতে পাচ্ছি, আমাদের রাস্তাটা বনের দিকেই যাচ্ছে, সন্ধ্যায় আসন্ন, এমন একটা সময়ে অচেনা অজানা বনের ভিতর দিয়ে যেতে হবে, ভাবতেই গা ছমছম করে উঠেছে, নিরবতা ভাঙা দরকার, নিরবতা মানুষের বড় খুনি, গলায় কাশ ঝেড়ে বললাম, হরি, তোমার পুরো নামতো জানা হলো না, হরি বললো বাবু হামরা গরীব মানুষ আছি, হামার ঠাকুর দাদা নগেন চন্দ্র হামাকে হরি দাসই কইতো, হরি দাসই আমার পুরা নাম বাবু, আমি বললাম আচ্ছা হরি আমাদের টগরপুর যেতে কতক্ষণ লাগবে? সে বললো বাবু সেতো ঠিক নেই, পথে জংলী জানোয়ার থাকলে হামার মহিষ গুলো আগাবে না, তবে মাঝ রাতের আগেই পৌঁছে যাবো, আচ্ছা বাবু তুই জংলি জানোয়ার এ ভয় পাছ? হরির কথায় কি উত্তর দিব, ভয় কিছুটা লাগছে, এমনি অজানা অচেনা জায়গা, তারপর কুয়াশার কারণে বাহিরে তেমন কিছুই দেখতে পাচ্ছি না, এর ভিতরে হরি বলছে বন্য প্রাণীর কথা, সাথে একটা বন্দুক থাকলেও লাভ নেই, আমি বন্দুক চালাতে পারি না, কিন্তু হরিকে ভয় পাইয়ে দেওয়া চলবে না, হরিকে বললাম, কি যে বলো তুমি আমার এসবে ভয় নেই, আমাদের হাতেখড়িই তো মরা কেটে, হরি এবার বললো, বাবু তুই কিন্তু জংলী জানোয়ার দেখলে চিৎকার দিবি না, আমি সব সামলে নিব, কিছু ক্ষণ পরপর বিক্ষিপ্ত শেয়ালের ডাক শুনতে পাচ্ছি, মনের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠেছে।

তা হরি ঘরে তোমার কে কে আছে? বাবু চুপ, একদম কথা কইবি না, সামনে কি যেন দেখা যাচ্ছে, হঠাৎ করে বুকের ভিতরে অস্থিরতা শুরু হলো, গাড়ি থেমে গেছে, আমাদের চারপাশেই এখন খুব ঘন জঙ্গল, বনের ভেতর থেকে কেমন যেন চিৎকার চেচামিচির শব্দ আসছে, কতগুলো পাখি ডানা ঝাপটে উড়ে গেলো, শব্দ গুলোর কোন নিদিষ্ট দিক খুঁজে পাচ্ছি না, খুব পঁচা মরার গন্ধ পাচ্ছি, হরি ফিসফিসিয়ে বললো, বাবু সাবধান বাহিরে তাকাবি না, আমি আরও শক্ত হয়ে গেলাম, গাড়ির ছাইয়ের ভিতরের একপাশটা কাপড় দিয়ে ঢাকা অন্যপাশে মালপত্র দিয়ে সাঁটা, ভিতরে একটা হারিকেন জ্বালানো আছে, সেটার আলো একেবারেই কম। বিশ্রী গন্ধটা আসতে আসতে দুরে চলে গেছে, বনটাও এখন একদম নিথর নিরব, হরি আবার জিজ্ঞেস করলো, বাবু তুই কি ভয় পাইছিলি? আমি বললাম হরি কি দেখেছিলি তখন, হরি বলল বাবু এরা মরা লাশের দল ছিলো, রাত হয়েছে তো কবর ছেড়ে বনে জঙ্গলে খেলতে এসেছে, আমি বললাম কি বলিস তুই, এসব কখনও সত্যি হয় নাকি? হরি বললো, বাবু হামাকে তুই অবিশ্বাস করলি? আমি ওকে মিথ্যা সান্ত¡না দিলাম, না হরি আমি ওটা এমনিই বললাম, আচ্ছা হরি তুইতো জানিস টগরপুরে নাকি আত্মহত্যা বেশি হয়, আসলে কি সমস্যা ওখানে? হরি বললো, বাবু হামি মূর্খ মানুষ, আমার জ্ঞান কম, হামার তো মনে হয় অভিষাপ। কিসের অভিষাপ? কিসের অভিষাপ হরি? সে বাবু অনেক লম্বা কাহিনী, পরাণ মাষ্টার ভালো বলতে পারবে।

—চলবে

সর্বশেষ - গল্প