মঙ্গলবার , ১০ নভেম্বর ২০২০ | ৯ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
  1. article
  2. Artist
  3. কবিতা
  4. কলাম
  5. গল্প
  6. গুণীজন

ট্রেন – ৪৭৪ (একটি হরর গল্প) পর্ব-৪

প্রতিবেদক
রুদ্র আমিন
নভেম্বর ১০, ২০২০ ৫:২১ অপরাহ্ণ
Train 474 Rudra Amin

ট্রেন – ৪৭৪ (একটি হরর গল্প) পর্ব-৩

ঘরের দরজাটা আবার কুঁকড়ে উঠলো, দরজা ঠেলে এক বৃদ্ধ ঢুকলেন, হাতে একটা লাঠি নিয়ে, লাঠিটা সম্ভবত ঘিলা লতার হবে, ঘিলা লতা গুলো খুব মোটা হয়, মাঝখান দিয়ে এমন একটা আঁকাবাঁকা, তাকে দেখে মনে হবে, কেউ হয়তো আস্ত সাপ নিয়ে হাঁঠছেন, এটা এদেশের অনেকে বিভিন্ন রোগের কারিশমা হিসাবে আখ্যা দিয়ে থাকেন, বৃদ্ধ ঘরে ঢুকেই দুই হাত করজোড় করে সালাম ঠুকলেন, তিনি বললেন নমষ্কার ডাঃ সাব, আমি পরিতোষ, লোকে বলে পরিতোষ কবিরাজ, আমি বললাম পরিতোষ বাবু আসুন, ভিতরে আসুন, আমার সামনে রাখা কড়াই কাঠের চেয়ারটায় ইশারায় বসতে বললাম, এর পর বললাম পরিতোষ বাবু আপনার কি সমস্যা? আপনি কিন্তু সব খুলে বলবেন, মনে করবেন এখানে কোন মানুষ নেই, ভাবতে পারেন আপনি আপনার নিজের মনের সাথে কথা বলছেন, পরিতোষ বাবু বললেন, জ্বী ডাঃ সাব, আমার সমস্যাটা গুলো খুব কঠিন, এখনও পর্যন্ত এ সমস্যাটার কোন সমাধান পাচ্ছি না, আমার দাদা ঠাকুর আমাকে যে বছর বিয়ে করালেন, সে বছর খুব বন্যা হলো, আপনাকে তো বলেছি আমি কবিরাজ মানুষ, সারা এলাকায় তখন পানিতে থৈ থৈ, বন ভেসে গেলো বানের পানিতে, লোকজন খুব অসুস্থ হতে থাকলো, এদের বেশিরভাগ ডায়েরিয়া আর কলেরা রোগী, কলেরার প্রকোপে অনেক মানুষ মরতে লাগলো। মানুষ মরে গেলে তাকে গোর দিতে হয় নতুবা সৎকার করতে হয়। কিন্তু সমস্যা হলো ভিন্ন।

আমি একটু অবাক হলাম, আবার কি সমস্যা, আচ্ছা বলতে থাকুন পরিতোষ বাবু, পরিতোষ বাবু আবার শুরু করলেন, লোকজন কে বা কারা জানি বললো, কি বললো? মৃতদেহ কলাপাতায় মুড়ে , কলা গাছের ভেলায় ভাসিয়ে দিতে লাগলো, যার কারণে এখানে ওখানে মরা পানিতে ভেসে বেড়াতে লাগলো, চারদিকে পঁচা মরা লাশের গন্ধে খুবই খারাপ অবস্থা। আমাকে একটু বাড়তি আয়ের জন্য বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াতে হলো, এক সন্ধ্যায় কোমড় সমান পানি মাড়িয়ে বাড়ি ফিরছিলাম, চারদিকে সাপের খুব উপদ্রব, খুব সাবধানে একটা পাঁচ ব্যাটারীর টর্চ জ্বেলে আসছিলাম, হঠাৎ চোখে পড়ল একটা মরার ভেলা ভেসে যাচ্ছে, দাঁড়িয়ে গেলাম, গ্রোতের তোড়ে সেই ভেলা দেখি আমার পিছু নিলো, কিছুক্ষণপর আমি একটু সরে আবার দিক পরির্বতন করলাম, তাতে বিশেষ ফল হলো না, সেই ভেলা একসময় আমার কাছেই চলে এলো, বুক তখন ধড়ফর করছিলো, মুখে রামের নাম নিতে লাগলাম, হঠাৎ শুনি কলাপাতা ভেদ করে এক শিশুর কান্না, শিশুর কান্না মনটাকে গলিয়ে দিলো, ভাবলাম কেউ হয়তো মরে গেছে ভেবে তাকে ভাসিয়ে দিয়েছে, অথচ শিশুটা তখনও জীবিত। কি করি, এদিকে আঁধার ঘনিয়ে আসছে, তাকে কোলে করে নিয়ে এলাম বাড়ি তারপর থেকেই সমস্যা।

তারপর কি হলো? পরিতোষ বাবু, পরিতোষ বাবু খানিক কেশে নিলেন, বললেন এরপর থেকেই আমার এক বদ অভ্যাস দাঁড়িয়ে গেছে, সে বন্যা থেকেই হাতে খড়ি আমার মরা মানুষের মাংস খাওয়া, এরপর থেকে এত গুলো বছর ধরে কবরস্থান গোর বা কখনও না পেলে মৃত প্রাণীর গোস্ত রক্ত খেয়ে আসছি, আমি বললাম বন্ধ করণে এসব বাজে কথা, আপনি আমাকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছেন, আমার দীর্ঘ জীবনে অনেক মানসিক রোগী দেখেছি, তারা কল্পনা রাজ্যের কথা বলে বেড়ায়, পরিতোষ বাবু এবার চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে গেলেন, বললেন কি বিশ্বাস হচ্ছে না? আর সেই অভিশপ্ত শিশুটি কিন্তু আপনার দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে ডাঃ সাব, ডাকবো ওকে, কৈ রে হারাধন, আমার সোনা মানিক, কই তুই, আয় বাপ আমার কৈ রে হারাধন জাদু আমার, দরজা আবার কুঁকড়ে উঠলো, আমি দরজার দিকে তাকিয়ে থ মেরে গেলাম।

ধমকের সুরে বললাম পরিতোষ এসব কি হচ্ছে শুনি? এই চার বছরের শিশুকে তুমি তোমার বিয়ের বছর কুড়িয়ে পেয়েছো এটা কেমন করে সম্ভব? এ তো এতদিনে যুবক বয়সের হওয়ার কথা, পরিতোষ কেশে বললেন , ডাঃ সাব রাগ করবেন না, দিব্যি বলছি, আমার কুড়িয়ে পাওয়া শিশুই হারাধন, সে বয়স মুক্ত, এত বছরেও তার একটা দাঁত পরেনি, সে কাউকে কিছু বললে তা খুব সন্নিকটে ঘটে যায়, অনেকে তাকে অপয়া শিশু বলে, ওর চোখ গুলো খুঁজে দেখান তো ডাঃ সাব, আমার খেয়াল করা হয়নি একটি মানুষের চোখ তো থাকবেই সে অন্ধ হউক আর ভালো, কিন্তু হারাধন এর দিকে তাকিয়ে আবার অবাক হয়ে গেলাম তার কোন চোখ নেই। নিজেকে বিরাট বিভক্তির মধ্যে ফেললাম, আমি কি তবে কোন দুঃস্বপ্ন দেখছি না তো, নাহ ! ঠিকই আছে আমার সামনে চোখহীন একটি শিশু আর তার প্রতিপালক পরিতোষ। আর্শ্চয, বড়ই রহস্যময় সব কিছু। মাথা কেমন আউলায়ে যাচ্ছে, আমি হয়তো টিকতে পারবো না, পরিতোষ চলে যাও এখান থেকে, তোমার ব্যাপারে আমি পরাণ মাষ্টারের সাথে কথা বলবো, হারাধন আর পরিতোষ বেড়িয়ে গেলো নিঃশব্দে, টেবিলে রাখা পিতলের জগ থেকে পানি খেলাম, নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলাম ।

কখন আমার পিছনে পরাণ মাষ্টার দাঁড়িয়ে তা অনুভব করতে পারিনি, পরাণ মাষ্টার বললেন, ডাঃ বাবু রোগী কি আরেকটা পাঠাবো? আমি বললাম না, আমি আজ আর রোগী দেখতে চাই না, বরং তুমি আমার ঢাকা যাওয়ার ব্যবস্থা করো, পরাণ মাষ্টার বললেন বাবু দুপুর গড়িয়ে গেলো, রুমে জল খাবার রাখা আছে খেয়ে নেবেন, আজকে আপনার আর শহরে ফেরা হবে না, আজ কোন ট্রেন নেই, আগামীকাল সকালে না হয় আপনাকে ট্রেনে স্টেশনে পৌছে দেওয়া হবে, আমি বললাম ঠিক আছে যাও, তুমি বরং সেটার ব্যবস্থা করো, আপতত আমাকে একটু একা থাকতে দাও বলতে বলতে আমি একটা বই হাতে নিচ্ছিলাম ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখি, পরাণ বাবু নেই, এই আটপৌড়ে ঘরের কাঠের দরজটায় একটু শব্দ হলো না, অবাক ব্যাপার। তবে কি নিজেই নিজের সাথে কথা বলছিলাম। আমার বোধ হয় ঘুমের সমস্যা হচ্ছে, তাই হয়তো কিছুটা কল্পনা কাজ করছে, আমাকে ঘুমুতে হবে, হঠাৎ মনে পড়ে গেলো পরাণ মাষ্টার এর জল খাবারের কথা, দেখি ঠিকই তো জল খাবার তো রাখাই আছে, ঢাকনা উল্টে দেখি সেখান থেকে ধোয়া উড়ছে, তাহলে পরাণ মাষ্টারের সাথেই কথা বলছিলাম ।

–চলবে

সর্বশেষ - কবিতা