বৃহস্পতিবার , ১৯ নভেম্বর ২০২০ | ৮ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
  1. article
  2. Artist
  3. কবিতা
  4. কলাম
  5. গল্প
  6. গুণীজন

ট্রেন – ৪৭৪ (একটি হরর গল্প) শেষ পর্ব

প্রতিবেদক
রুদ্র আমিন
নভেম্বর ১৯, ২০২০ ১২:৪৯ অপরাহ্ণ
Train 474 Rudra Amin

ট্রেন – ৪৭৪ (একটি হরর গল্প) পর্ব-৫

ডাঃ ফজলে এলাহী এসেছেন, হাতে একগাদা ফলমুল, খুব হাসি পেলো বাংলাদেশে রোগী দেখতে গেলে এক সময় ফলমুল নিয়ে যাওয়া হতো, সে রীতি তাহলে এখনও আছে, এলাহী সালাম দিয়ে বললো স্যার এখন কেমন আছেন? আমি বললাম ভালো, এলাহী বললো স্যার আমাকে ক্ষমা করবেন, আমি আপনাকে বিপদের মুখে ফেলে দিয়েছিলাম, আপনাকে মাতুয়াইল গোরস্থানের পাশে পেয়েছিলাম, কিন্তু আমি যখন জানলাম আপনি টগরপুর পৌছাতে পারেননি তখন, পরাণ মাষ্টারকে আপনাকে খোঁজার জন্য ফোনে বলেছিলাম, আপনি দেশের একজন রতœ, চারদিক থেকে চাপ আসতে থাকলো, থানা পুলিশ সাংবাদিক সবাই আপনার জন্য মুখিয়ে ছিলো, তখনই রহস্যের জট খুললেন রেলওয়ের এক অবসরপ্রাপ্ত স্টেশন মাষ্টার, তিনি যা বললেন তাতে, আপনাকে যে ফিরে পাবো তা আশা করিনি আমরা কেউ, ১৯১৭ইং ব্রিটিশ শাসন আমলে ততকালীন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা একটি ট্রেন ছিলো, যার নাম্বার ছিলো ৪৭৪, সেই ট্রেন এক শীতের রাতে যাত্রী নিয়ে চট্রগ্রাম স্টেশন ছাড়লো, এরপর নিয়ম অনুযায়ী স্টপেজ গুলোতে থেমে থেমে আসছিলো কিন্তু সে ট্রেন আর নাকি ঢাকা স্টেশনে পৌছায়নি, এরপর দিন ঘোড়া দিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ ঐ ট্রেনের খোঁজ করলো, কিন্তু সমস্ত লাইন ফাঁকা, কোথাও ট্রেনটির টিকিটি দেখা মিলল না, এর চারদিন পর ভৈরব সেতুর নীচে নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের থেকে শোনা গেল ভিন্ন ঘটনা, তারা রাতে একটি বড় আলো যুক্ত সাপকে ভৈরব রেল সেতু থেকে নাকি নামতে দেখেছে নদীতে, সেটা কি সাপ ছিলো না ট্রেন-৪৭৪ ছিলো তা নিয়ে অনেক কাহিনী প্রচলিত, কুয়াশার কারণে জেলেরা হয়তো ভালোভাবে দেখতে পায়নি, এরপর থেকে এই ট্রেনটি নিখোঁজ আর সাথে এর যাত্রীরা। রেলকর্তৃপক্ষের খাতায় লেখা ছিলো ট্রেন-৪৭৪ মিসিং।

কিন্তু সেই ষ্টেশন মাষ্টার জানালেন, যে তিনি প্রায় যেসব আমাবস্যার দিন সোমবার থাকে, সে সব দিনে তাকে চলাচল করতে, সে ট্রেন নাকি মাঝরাতে ষ্টেশনে আসে, যাত্রী তুলে আবার হারিয়ে যায়, শুধু ব্যাপারটি উনি একা নয়, অনেকেই জানেন, যাত্রীরা যাতে ভয় না পায়, রেল কর্তৃপক্ষের লোকসানের কথা বিবেচনা করে সবাই এই ট্রেনটির ব্যাপারে চুপ থেকেছে, উনি আরও জানিয়েছেন ট্রেনে কাটা পড়া, ট্রেনের ভিতর মরে যাওয়া আত্মা গুলো নাকি এই ট্রেনের বিশেষ যাত্রী, তিনি বলেন অনেকেই ভুল করে ট্রেনে চেপে বসলে তাদের আর ফিরে পাওয়া যায় না। সেই থেকে অনেক যাত্রীদের এই ট্রেনের প্লাটফর্মে থাকা অবস্থায় কৌশলে ট্রেন ফেল করিয়ে দেন। আপনি স্যার ভুল করে সেই ১৯১৭ সালের ট্রেনে চেপে ছিলেন, সৃষ্টিকর্তা আপনাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন আপনার উদ্দেশ্য মহৎ ছিলো বলে। স্যার আমাকে ক্ষমা করবেন, আমার জন্যই আপনি এত কষ্ট ভোগ করেছেন। আমি বললাম ঠিক আছে এলাহী, আমি কাল আমেরিকা ফিরতে চাই, আমার জীবনে সবচেয়ে ভয়ানক অভিজ্ঞতা হয়তো আমার আগামী দিনের অভিজ্ঞতাকে বাড়িয়ে দিবে ।

লীলাবতী এতক্ষণেও ছবি আঁকতে পারেনি, ইরাবতী চাল ভেজে এনেছে, সাথে লেবু লবঙ্গ চা, এলাহীকে এদের ব্যাপারে বলা হয়নি, এরা খুব ভালো গায়, ওদের নার্স না হয়ে ষ্টেজে থাকাটাই ভালো ছিলো, এখন আবার রেণুবালার রূপের সাথে লীলাবতীকে মেলাতে ইচ্ছে করছে। লীলাবতী কখন যে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে আমি টের পাইনি, সে দেখছি পরাণ মাষ্টারের মত শব্দহীন চলাফেরা করতে পারে, লীলাবতী আমার ছবি কোথায়? লীলাবতী ছবি একেঁছে, সে আমার হাতে ছবিটি ধরিয়ে দিলো, ছবি দেখে আবার চোখ কপালে উঠে গেলো, একটা ট্রেন লাইনের সামনে দিয়ে একটা ছেলে হেঁটে যাচ্ছে, ছেলেটির চোখ নেই, এ যেন সেই হারাধন এর ফটোকপি, সে একটা মৃতদেহের হাত কামড়াচ্ছে আর তার পিছনে একটা ট্রেন অগ্রগামী যার নাম্বার দেখতে পাচ্ছি-৪৭৪। আশ্চার্য এটা তো সেই মিসিং ট্রেন, আর আমি তো লীলাবতীকে ট্রেনের ছবি আঁকতে বলিনি, কিংবা হারাধনের মৃতদেহ হাত খাওয়ার কথা, চিৎকার দিয়ে ডাকলাম ইরাবতী লীলাবতী, কোন উত্তর এলো না।

কি রে পড়েছিস ডায়েরীটা? এটা আমাদের দাদুর জীবনে ঘটে যাওয়া সত্যিকারের ঘটনা, এই দুইশত বছর পরও ষ্টেশনে আসতে পারে সেই ট্রেন-৪৭৪, যে ট্রেনের কোন ক্ষয় নেই, সে তো চলছে হারিয়ে যাওয়ার পর দিন থেকে, এখন মাঝরাতে অপেক্ষায় থাকে সেই ট্রেন-৪৭৪, কোন পথভোলা যাত্রীর আশায়।