শনিবার , ৫ ডিসেম্বর ২০২০ | ৮ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
  1. article
  2. Artist
  3. কবিতা
  4. কলাম
  5. গল্প
  6. গুণীজন

ঝরে পড়া ফুল (পর্ব-২)

প্রতিবেদক
রুদ্র আমিন
ডিসেম্বর ৫, ২০২০ ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ
ঝড়ে পড়া ফুল

গত পর্বে যা ছিলো — পর্ব-১

দীনার যথেষ্ট বয়স হয়েছে বুঝবার। রুনার যখন বিয়ে হয়ে যায় তখন দীনার বয়স চৌদ্দ কি পনের। চৌদ্দ কি পনের বলার কারণ একটাই, যেখানে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিটি মূহুর্তে পরিবেশ ও সমাজের সাথে নানা প্রতিকূলতায় যুদ্ধ করে থাকতে হয়, সেখানে আবার নির্দিষ্ট বয়সের কি হিসেব।

হুটহাট করে বিয়ে হয়ে গেলো রুনার। পরিবারের সবার মাঝেই ছিলো নানা সংকোচ, গরীব ঘরের মেয়ে মাতববরের বাড়িতে থাকতে পারবে তো? তাদের বাবা-মায়ের মাঝে সব সময় ঝড় বয়ে চলছিলো দিনের পর দিন। কেন যে মেয়েটি মাতব্বরের ছেলেকে ভালোবাসলো? আমাদের নিজের অবস্থার কথা কেন মনে করেনি মেয়েটি একবারও।

কিছুদিন সংসার করার পর কাল বৈশাখী ঝড়ের মতোই রুনার সংসার ভেঙে যায়। আবার তার পথচলা এবং বসবাস পরিবারের সাথেই। অভাবের সংসার। দু-বেলা দু’মুঠো ভাত পেটে যায় না। হঠাৎ করেই একদিন রুনা ঢাকায় চলে গেল অন্যের ঘরে কাজ করতে।

যতদূর মনে পড়ে তখন আমার বয়স ১৬ বছর। বাবার স্বল্প আয়ের সংসার চলানো খুবই কষ্ট সাধ্য হয়ে উঠেছে, অভাব অনটনের পরিবারের যেমনটি হয় ঠিক তেমনই। একদিন আমিও ঢাকায় বোনের নিকট চলে এলাম। যদি গামেণ্টসে কাজ করে পরিবারের কিছুটা অভাব দূর করা যায়। বড় বোনটির মাথায় চেপে বসা বোজাটা সরে যাবে, বেঁচে যাবে বাবা মা এবং আমরা সবাই।

একদিন দু’দিন এভাবে সাপ্তাহ খানেক চলে গেল কোন কাজের ব্যবস্থা হলো না। দিনে দিনে নিজেকে আরও দূর্বল মনে হতে লাগল। কিভাবে চলবে সংসার। বোনের যা আয় তার উপর আমি উড়ে এসে জুড়ে বসেছি। বাড়িতে টাকা পাঠানোর হার যে কমে গেল এ মাসে। নানান চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল। খেতেও ভাল লাগে না। ঘুমও হারাম হয়ে যাওয়ার উপক্রম।

ঘুম থেকে উঠে জীবিকার সন্ধানে আবার পথচলা। আজও কিছুই হলো না। রাতে বড় বোন আমায় সন্ধান দিল এই চুংফুং গার্মেন্টস নামক একটি গার্মেন্টসের। বোনের কথা মতো সকাল সকাল সেই গার্মেন্টসের দুয়ারে গিয়ে দাড়ালাম। কিন্তু সেখানে নিতে চাইছিল না কারন আমার বয়স কম। অনেক অনুরোধ আকুতি মিনতি করে একটা আশ্বাস পেলাম। বিনা বেতনের মতোই খাটতে হবে, যে টাকা দিবে তাতে শুধুই পেটের খোরাক হবে। কিন্তু থাকার কি হবে… বোনের সাথে থাকলে তো বোনের উপর সকল চাপ এসে পড়বে। সেদিন বাসায় ফিরে বোনকে সব খুলে বললাম। বোন বলল তুই তো কাজ জানিস না তোকে কে বেশি বেতন দিবেন। কিছুদিন কষ্ট কর দেখবি হাতের কাজ শিখলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কি আর করা বোনের কথা মতো কাজ শুরু করে দিলাম। একে একে দেড় মাস কেটে গেল তারপর একটা বেতন নির্ধারন হলো। বেতনটা স্বল্প হলেও আমার থাকা-খাওয়া সব মিটিয়েও কিছু হাতে থাকবে। এবার মনে হয় বাড়িতে কিছু টাকা পাঠাতে পারব। সেখানে আরও মাস তিনেক চাকরির বয়স হয়ে গেলে বেতন বাড়ানোর পর। বেশ ভালই চলছে আমাদের সংসার। আমার সামান্য আর বড় বোনের সামান্য মিলিয়ে ভালই চলছে বাবা মায়ের সংসার। অনেক দিন হলো বাড়ি থেকে এসেছি খুব মনে পড়ছে বাবা-মা ছোট ভাই-বোনের কথা।

শুধুই মনের সান্ত¡না তাদের জন্য কিছু করতে পারছি বলে। বড় বোনের আধা বেলা আধা পেট খাওয়া সত্যি মনে নেয়া যায় না। কত সময় বেশি ক্ষুধায় পানি পান করেও কিছুটা ক্ষুধার নিবারণ করেছি। এসব কথা মনে মনে ভাবতেই দীনার দু’চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগল। দু’হাত দিয়ে চোে মুছে শুধুই নিজেকে সান্ত্বনা দিল বোন মা-বাবা ভাল আছে বলে। আর কি এমনটাই তো আমার চাওয়া ছিল।

বেশ কাটছিল গার্মেন্টস জীবন। জীবনে রঙীন স্বপ্ন গুলো লুকোচুরি খেলতে লাগল। অনেকদিন ধরেই খেয়াল করছিলাম একটি ছেলে শুরু অপলক তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। কিন্তু কিছুই বলে না। কিছুদিন পর সেই ছেলের সাথে আমার পরিচয় হলো। কথা হলো, কোথায় থাকি, বাড়ি কোথায় এর বেশি কিছু সেদিন আর জানতে চায়নি আমার নিকট।

শহরে থাকার বয়সটাও প্রায় মাস ছয়েক হয়ে গেল। তবুও শহরটার সবকিছুই অজানা অচেনা মনে হতো সব সময়। শুধু বাসা আর গার্মেন্টস্, গার্মেন্টস্ আর বাসা, এই ছিল আমার শহর দেখাশোনা। বড় বোন নিষেধ করেছিল তাকে না বলে কোনদিন যেন কোথাও না যাই। শহরটা ভাল নয় এখানে হাজারও রঙের মানুষের বসবাস। তাই কোনদিন সাহস করে একা কোথায় যাইনি।

–চলবে