মুজিব কোর্ট একটি আদর্শ, একটি চেতনা ও একটি গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস! হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই বিশেষ পোশাকটি পড়তেন বলে এর নাম “মুজিব কোর্ট এই মুজিব কোর্ট পড়ে তিনি ৬ দফা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা ও স্বাধীনতা পরবর্তী দেশ শাসন সবই করেছেন। যুগযুগ ধরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বহন করছে এই মুজিব কোট। তাই যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করেন তারা একে একটি আদর্শ বলে মানে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে যারা রাজনীতি করছেন তারাও এই ‘মুজিব কোট’ ব্যবহার করছেন। এটাই হওয়া উচিৎ বটে। কিন্তু ধীরে ধীরে মুজিব কোর্ট এর সন্মানহানী হচ্ছে কতিপয় লেবাসধারী আওয়ামীলীগারদের দ্বারা।
মুজিব কোটের এর ইতিহাসঃ স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ভারত উপমহাদেশ স্বাধীনের সময় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে এই নেহেরু কোটের প্রচলন শুরু করেন। মুজিব কোট মূলত নেহ্রু জ্যাকেটের একটি সংস্করণ, যা ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু পরতেন। অনেকের মতে শেখ মুজিব ছয় বোতাম বিশিষ্ট এই কোটটি পরতেন, যা ১৯৬৬-এর ছয় দফা দাবীর সাথে সম্পর্কিত। তবে, বঙ্গবন্ধুর কিছু ঘনিষ্ঠজন এবং প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি যে মুজিব কোট এবং ছয় দফা সনদের মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই। শেখ মুজিব এই কোটটি কবে থেকে পরতে শুরু করেছিলেন তা স্পষ্টভাবে জানা যায়নি, তবে বলা হয় যে ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে তিনি এই কোটটি পরতে শুরু করেন। তবে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় মুজিবের আইনজীবী কামাল হোসেন বলেন যে ১৯৬৮ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু এই কোটটি পরতেন বলে এর নাম দেওয়া হয় মুজিব কোট।
আধুনিক যুগের রাজনীতিবিদদের মধ্যে এই কোটটি জনপ্রিয়।এটি এখন একটি আইকন হিসাবে স্বীকৃত, বিশেষত আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের নেতার আদর্শ ও ঐতিহ্য ধারণের অংশ হিসাবে মুজিব কোট ব্যবহার করেন। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশ স্বাধীন হবার পরে বাংলাদেশে প্রিয় এই নেতার যা যা প্রিয় ছিলো, দেশের মানুষের কাছে তাই প্রিয় হয়ে উঠেছিলো। তখনকার বঙ্গবন্ধুর আশপাশের লোকজন এমন কি তরুণরাও তাকে অনুসরণ করতো। পোশাক-আশাক সব কিছুতেই তাকে অনুকরণ করা হতো। সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা আর ৬ বোতামের কালো কোট, বঙ্গবন্ধুর বিশেষ পোশাক ছিল। ৬ বোতামের কালো কোটটি পরবর্তীতে মুজিব কোট নামে বেশ পরিচয় পায়। যুগযুগ ধরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বহন করছে এই মুজিব কোট।
স্বাধীনতার আগে শেখ মুজিবের গায়ের কোটটি কিন্তু কোনো খ্যাতি বা নাম লাভ করেনি। মূলত স্বাধীনতার পরেই হাতকাটা এই কোটটি বিখ্যাত হয়ে ওঠে। কোটটিতে ছিল ৬টি বোতাম। ১৯৬৬ সালে পূর্ব পাকিস্তানে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ৬ দফা প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এই ৬ দফার প্রতীক মুজিব কোটের ৬টি বোতাম।
বঙ্গবন্ধুর বিশেষ পোশাক ছিলো সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা আর ৬ বোতামের কালো কোট। যে কোটটি পরবর্তীতে ‘মুজিব কোট’ নামে বেশি পরিচিতি পায়। যারা মুজিব কোট ব্যবহার করেন তাদের অধিকাংশই হয়তো জানেন না মুজিব কোটের ইতিহাস। বর্তমানে আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ রাজনৈতিক নেতা কর্মীরা এই মুজিব কোট পড়ে থাকেন। শুধু তাই নয় বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের কাছেও বেশ জনপ্রিয় এই মুজিব কোট। অনেক রাজনৈতিক নেতাদের মতে বঙ্গবন্ধুর এ মুজিব কোটকে ধারণ করা মানে বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করার সামিল। বঙ্গবন্ধু ঠিক কত সাল থেকে কালো কোট পরা শুরু করেছিলেন তার কোনো নির্দ্রিষ্ট সময়সীমা পাওয়া যায়নি। তবে মাওলানা ভাসানী এবং শামসুল হক যখন আওয়ামী মুসলীম লীগ করলেন তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মোস্তাক আহমেদ সংগঠনটির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। ধারণা করা হয়, তখন থেকেই বঙ্গবন্ধুকে এই কোট পড়তে বেশি দেখা যায়। তবে অনেক বিশ্লেষকের মতে, এই কোটটির প্রচলন ‘নেহেরু কোট’ থেকে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এক ছাত্র তার সহপাঠী তাজউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা দিতে গিয়েছিলেন। তখন বঙ্গবন্ধু এই মুজিব কোটটি তার গায়ে জড়িয়ে রেখেছিলেন। তখন ওই ছাত্র লক্ষ্য করলেন কোটে ৬টি বোতাম রয়েছে। তিনি বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার কোটের বোতাম ৬টি কেন? উত্তরে বঙ্গবন্ধু তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, এই ৬টি বোতাম আমার ঘোষিত ৬ দফার প্রতীক।’ আর এ কারণেই একটি আদর্শ মুজিব কোটের প্রতিটিতে বোতামের সংখ্যা থাকে ৬টি। এই পোশাক পরেই বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ভাষণ দিয়েছেন, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, সর্বোপরি নিজেকে বাঙালির ফ্যাশন আইকন হিসেবে বিশ্বের দরবারে হাজির করেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশেষ পোশাক ছিলো সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা আর ৬ বোতামের কালো কোট। যে কোটটি পরবর্তীতে ‘মুজিব কোট’ নামে বেশি পরিচিতি পায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ এবং তাকে যারা ভালোবাসতেন তারাই পরবর্তিতে এই ‘মুজিব কোট’ ব্যবহার করতেন। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মাঝেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই ‘মুজিব কোট’। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে যারা রাজনীতি করছেন তারাও এই ‘মুজিব কোট’ ব্যবহার করছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভক্তদের কাছে, এই ‘মুজিব কোট’ ধারণ করা মানেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ধারণ করার সামিল। পায়জামা-পাঞ্জাবির সাথে ‘মুজিব কোট’ ছাড়াও মোটা ফ্রেমের চশমা, চুরুটের পাইপও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আইকন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
যে কেউ চাইলে যেন এই মুজিব কোর্ট ব্যবহার করতে না পারে তার জন্য একটা নীতিমালা দরকার। কেউ যাতে মুজিব কোর্ট এর অবমাননা ও অপব্যবহার করতে না পারে এর জন্য নেতা কর্মীদের নিজেদের সজাগ থাকতে হবে। সুবিধাবাদী ও অনুপ্রবেশকারীদের বয়কট করুন নির্দ্বিধায়। এতে দল ও আপনার সবার মঙ্গল। বঙ্গবন্ধু একটি প্রতিষ্ঠান, একটি আদর্শ, একটি ইতিহাস একে হৃদয়ে ধারন করুণ অন্য কোন বহিঃপ্রকাশে নয়।
মুজিব কোর্টের অপব্যহার এবং সন্মানহানীঃ যারা অনেকটাই উড়ে এসে জুড়ে বসেছে বলা যায়। যাদের কোন আদর্শ নেই নীতি নেই। কেবল ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য আওয়ামীলীগ সেজেছে ছলে বলে কৌশলে। এইসব লেবাসধারী আওয়ামীলীগরা মুজিব কোর্ট পড়ে বড় বড় নেতাদের ম্যানেজ করে বাগীয়ে নিয়েছে নানা পদ পদবি। রাজনৈতিক নানা সুবিধা বনে গেছে ব্যবসা বাণিজ্যের মালিক। যেখানে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হৃদয়ে ধারন করা অনেকে আজ অবহেলিত, নানা কারনে নির্যাতিত যার পরিসংখ্যান নেহায়েত কম নয়। প্রতিবেদনের শেষ অংশে মুজিব কোর্ট কি ও এর ইতিহাস সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে।
লেবাসধারী আওয়ামী লীগাররা কি করে বুঝবে মুজিব কোর্ট কি? কি এর ইতিহাস? এরা জাস্ট সুবিধাবাদী ভন্ড ও প্রতারক ও বটে! এতো বড় একটা সংগঠনে কি আদর্শিক নেতা কর্মীর অভাব আছে যে অন্য দলের কর্মীদের বাগীয়ে আনতে হবে? যারা শুধু নিজেদের পিঠ বাঁচাতে ও পেট বাঁচাতে সাময়িক আশ্রয় নিয়েছে মাত্র। সরকার ক্ষমতা হারালে এরাই সবার আগে ভোল পাল্টিয়ে চরম আঘাত করবে। এরা হতে পারে আওয়ামীলীগ করা অমুক তমুক নেতার ভাই ব্রাদার। হতে পারে এদের কাছ থেকে কোন সুবিধা পাওয়া যাবে! তাই বলে নিজ দলের নীতি আদর্শকে বিসর্জন দিতে হবে? এটা বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক কোন নেতার কাজ হতে পারে না।
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তো নিজেই বলেছিলেন, হাইব্রিড নেতায় দেশ ভরে গেছে, যেন নেতা উৎপাদনের কারখানা রয়েছে। ‘কাউওয়া’ শব্দটা তিনি রাজনীতিতে যুক্ত করে জনপ্রিয় করেছেন। প্রসঙ্গত ‘কাউওয়া’, ‘হাইব্রিড’, ‘অনুপ্রবেশকারী’, ‘নব্য আওয়ামী লীগার’, ‘আশ্রয়দাতা’, ‘সন্দেহভাজন’, ‘নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণকারী’, ‘ধর্ষণকারী’ প্রভৃতির বিরুদ্ধে অনবরত হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হতে থাকলেও এখন পর্যন্ত কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ আওয়ামী লীগ সংগঠন থেকে নেয়া হয়েছে বলে দৃষ্টিগোচরে আসছে না। যারা অনুপ্রবেশ করেছে তারা যেমন আছে বহালতবিয়তে, তেমনি প্রবেশের পথও বন্ধ করা হচ্ছে না। ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটিতে অনুপ্রবেশকারী জামায়াত-শিবির আছে বলে কাগজপত্রে প্রমাণ প্রকাশ হলেও এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা যায়নি। এদিকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রদত্ত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি সরকার কতটা কার্যকর করতে পারছে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এদিক-ওদিক কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে যতটা তৎপর ও সফল, ঠিক ততটাই পিছিয়ে পড়ছে সাংগঠনিক বিশেষত তথাকথিত নেতাকর্মী ক্ষতিকরদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে। রাজনীতির সঙ্গে সংগঠন যথাযথ উপযোগী করার বিষয়ে আওয়ামী লীগ পিছিয়ে পড়ছে। সামঞ্জস্য বিধান করা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। ফলে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।
জিব কোর্টের সন্মানহানী করছেন। আওয়ামীলীগের মুখে চুন কালী মাখছেন। বর্তমান আওয়ামীলীগে হাজার হাজার অনুপ্রবেশকারী আছে তারাই এখন বড় আওয়ামীলীগার। তাদের দাপটের কাছে প্রকৃত আওয়ামীলীগাররা অনেকটাই নাজেহাল হয়। মুজিব কোর্টকে বানাচ্ছেন অপকর্মের ঢাল! আরে আদর্শের রাজনীতি করলে মুজিব কোর্ট পড়ে নিজেকে জাহির করতে হবে কেন? কথায় আছে “চেনা ব্রাহ্মণের পৈতা লাগে না”